চিকুনগুনিয়া - Chikungunya in Bengali

Dr. Ajay Mohan (AIIMS)MBBS

February 08, 2019

March 06, 2020

চিকুনগুনিয়া
চিকুনগুনিয়া

সারাংশ

চিকুনগুনিয়া এডিস মশা বাহিত একটি ভাইরাল রোগ। গত এক দশকে আফ্রিকা, এশিয়া, ভারতবর্ষ, দি ক্যরিবিয়ান এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাতে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বাহক মশার দ্বারা আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকের উপসর্গ দেখা যায়। উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর এবং গাঁটের ব্যথা, যা তীব্র হতে পারে। বেশির ভাগ রোগীর 7-10 দিনের মধ্যে রোগমুক্তি হওয়া শুরু হয়। নবজাতক শিশুদের এবং বৃদ্ধদের জটিলতার আশঙ্কা বেশি। আশে পাশের জমে থাকা জলে এডিস মশার বসবাস এবং বংশবৃদ্ধি হয়। অতএব, আশে পাশের এলাকা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা রোগের প্রকোপ কমাতে জরুরী। মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে কুলার, ফুলের পট, ফুলদানী বা অ্যাকোরিয়ামে জমে থাকা জল প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত 3-4 বার পরিষ্কার জল দিয়ে বদল দিতে হবে। অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি হচ্ছে মশারীর ব্যবহার, মশা তাড়ানোর মলম/ক্রিম এবং প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ করার কোন টিকা নেই এবং নিরাময়ের জন্য কোন ওষুধ নেই। তাই উপসর্গগুলি হ্রাস করাই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হয়। চিকেনগুনিয়া আর ডেঙ্গির উপসর্গগুলি প্রায় একই রকমের। দুই ক্ষেত্রেই জ্বর হয়। সুতরাং, এই দুইটি রোগের মধ্যে বিভ্রান্ত হওয়া সম্ভব। তাই চিকিৎসা শুরু করতে সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা হলে 2-3 সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গগুলি কমে যায়। চিকেনগুনিয়ার জটিলতা বিরল। প্রতিরোধী কৌশল দুর্বল সম্প্রদায়গুলির মধ্যে চিকেনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে খুব সহায়ক হতে পারে।

চিকুনগুনিয়া এর উপসর্গ - Symptoms of Chikungunya in Bengali

সংক্রামিত মশার কামড়ের 3-7 দিনের মধ্যে চিকেনগুনিয়ার লক্ষণগুলি ফুটে ওঠে। এই লক্ষণগুলি কম থেকে তীব্র হতে পারে। প্রায়শই, এই রোগটিকে ডেঙ্গি জ্বর ভেবে বিভ্রান্তি হতে পারে, বিশেষত সেই সব অঞ্চলে যেখান মশা-বাহিত রোগ খুবই সাধারণ, কারণ এই দুটি রোগের উপসর্গগুলি প্রায় একই রকমের। এমনও হয়েছে যে আক্রান্ত মানুষটির দেহে রোগের কোন উপসর্গই নেই। তবে এই রকম ঘটনা খুবই বিরল। চিকেনগুনিয়ার সব চেয়ে বিশিষ্ট লক্ষণগুলি হল:

  • হঠাৎ জ্বর আসা
    জ্বর অল্প থেকে বেশি মাত্রার হতে পারে এবং দুই দিন পর্যন্ত থাকে। জ্বরের সাথে শীত করতে পারে এবং কাঁপুনি হতে পারে।
  • গাঁটে তীব্র ব্যথা
    গাঁটের ব্যথা সকাল বেলায় খুব বেশি থাকে, হাঁটা চলা করলে ব্যথা আরও বেড়ে যায়। কারুর দেহেও অল্প ব্যথা হতে পারে; বয়স্কদের গাঁটের ব্যথা অসহনীয় হতে পারে। অনেকের গাঁটের ব্যথা কয়েক মাস থাকলেও এর তীব্রতা ক্রমশ: হ্রাস পেতে থাকে।
  • পেশীর ব্যথা
    পেশীর ব্যথা আর গাঁটের ব্যথা হল চিকেনগুনিয়ার সব চেয়ে তীব্র উপসর্গ।
  • অন্যান্য উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

যদি উপসর্গগুলি অসহনীয় হয়ে পড়ে এবং রক্তক্ষরণ হয়, তাহলে অবশ্যই ডাক্তারবাবুর উপদেশ নিতে হবে।

চিকুনগুনিয়া এর চিকিৎসা - Treatment of Chikungunya in Bengali

চিকেনগুনিয়া নিরাময় করার মত কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। চিকিৎসার লক্ষ্য থাকে ব্যথার ও জ্বরের মত উপসর্গগুলি হ্রাস করা এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা। নির্দিষ্টভাবে চিকেনগুনিয়া প্রতিরোধক কোন টিকাও পাওয়া যায় না। তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থাই এর চিকিৎসা।

ব্যথা ও জ্বর থেকে আরাম পেতে প্যারাসিটামল নেওয়া যেতে পারে। ডাক্তারবাবুর অনুমোদন ছাড়া অ্যাসপিরিন জাতিয় বেদনা-নাশক ওষুধ এবং অন্যান্য নন-স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধ (এন-এস-এ-আই-ডি) নেওয়া চলবে না। এর কারণ হল যে জ্বর যদি ডেঙ্গি থেকে হয়ে থাকে তাহলে অ্যাসপিরিন'এ রক্তক্ষরণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়।

রোগী যদি অন্য কোনও অসুখের জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে থাকেন, তাহলে এটা অত্যন্ত জরুরী যে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ না করে চিকেনগুনিয়ার জন্য ওষুধ নেবেন না।

জীবনধারার ব্যবস্থাপনা

চিকিৎসা যদি বাড়িতে হতে থাকে, তাহলে নিচে দেওয়া পরামর্শগুলি মেনে চলতে হবে:

সাধারণ তত্ত্বাবধান

  • প্রচুর বিশ্রাম নিন। পরিশ্রম করলে পেশীর ব্যথা বৃদ্ধি পেয়ে ক্লান্তি আসতে পারে।
  • যখন একটু সুস্থ বোধ করবেন, তখন ধীরে ধীরে অল্প-স্বল্প নড়া-চড়া করুন। এতে পেশীগুলির জড়তা কেটে যাবে। কাজেই অল্প একটু হাঁটা-চলা ব্যথা কমতে সাহায্য করবে।
  • আরামদায়ক পরিবেশে বিশ্রাম করুন। খুব গরম জায়গা পরিহার করে চলুন নয়তো গাঁটের ব্যথা খুব বেড়ে যাবে।
  • জ্বর কমাতে প্যারাসিটামল বড়ি দিনে 4 বারের বেশি খাবেন না।
  • বেদনা-নাশক ওষুধ অবশ্যই পরিহার করতে হবে।
  • প্রদাহ এবং ফোলা কমাতে ঠাণ্ডা জলের কমপ্রেস নেওয়া যেতে পারে। এতে ব্যথাও কমবে।
  • চিকেনগুনিয়া হয়েছে জানতে পারার পর মশারীর ভিতরে শয়ন করবেন। এতে আপনাকে মশা কামড়াতে পারবে না আর রোগও ছড়াতে পারবে না। প্রচুর জল পান করবেন।

আহার

  • প্রচুর তরল পদার্থ পান করুন। শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের সন্তলন বজায় রাখতে আপনি ফোটানো জলের সাথে ওড়াল রিহাইড্রেশান সল্টস পান করতেও পারেন। এটা আরও জরুরী যদি আপনার বমি হতে থাকত কিম্বা আপনার হজমের সমস্যা ছিল।
  • রস, বাটার-মিল্ক, ডাবের জল এবং তাজা সবজির রসের মত তরল পদার্থে প্রচুর অত্যাবশ্যক পুষ্টি থাকে, যা আপনার সুস্থ হয়ে ওঠাতে সাহায্য করে।
  • নিয়মিত সময়ের ব্যবধানে অল্প করে খাবার খাওয়া প্রয়োজন। এতে দুর্বলতা এবং ক্লান্তি কেটে যায়। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে শক্তি তৈরি হয়। তবে প্রক্রিয়াকরণজাত খাদ্য এবং মিষ্টি খাবেন না কারণ এতে দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়।
  • যদি আপনার পেটের কোন গোলমাল না থাকে তবে হালকা মশলা-যুক্ত খাবার খেতে নিষেধ নেই। এতে খাদ্য সুস্বাদু হবে। তবে অতিরিক্ত মশলা দিল অ্যাসিড রিফ্লাক্স হতে পারে। (আরও পড়ুন - গ্যাস্ট্রোইসোফেগাল রেফ্লাক্স অসুখের চিকিৎসা)
  • ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে। তাই কমলালেবু, পেয়ারা, মিষ্টি আলু, লেবু এবং পেঁপের মত ফলগুলি নিরাময় হতে সাহায্য করবে।> সমৃদ্ধ ফল শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে। তাই কমলালেবু, পেয়ারা, মিষ্টি আলু, <লেবু> এবং <পেঁপে>র মত ফলগুলি নিরাময় হতে সাহায্য করবে।
  • নিরাময়ের সময় শরীরের জলের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া তরলগুলি, যেমন মদ, কফি বা চা পান করা থেকে বিরত থাকুন।

চিকুনগুনিয়া কি - What is Chikungunya in Bengali

চিকেনগুনিয়া একটি মশা-বাহিত ভাইরাল রোগ। চিকেনগুনিয়ার প্রকোপ সর্ব প্রথম জানা যায় 1952 সালে দক্ষিণ তানজানিয়া দেশে। চিকেনগুনিয়া রোগে তীব্র গাঁট ব্যথা এবং জ্বর হয়। ডেঙ্গি এবং জিকা (মশা-বাহিত ভাইরাল রোগ) রোগের সাথে চিকেনগুনিয়া রোগের অনেক সাদৃশ্য আছে। এতে চিকেনগুনিয়া রোগের ভুল নির্ণয় হতে পারে। বর্তমানে এই রোগ প্রতিরোধ করার মত কোন টিকা নেই। সেরা ব্যবস্থা হল হল মশার আক্রমণ থেকে বাঁচা। চিকেনগুনিয়ায় আক্রান্ত রোগীর রক্ত শোষণ করেই এডিস মশা (রোগের বাহক) সংক্রামিত হয় এবং রোগ ছড়ায়। এই মশা ডেঙ্গিও ছড়াতে পারে।



তথ্যসূত্র

  1. World Health Organization [Internet]. Geneva (SUI): World Health Organization; Chikungunya.
  2. J. Erin Staples, Susan L. Hills, Ann M. Powers. Infectious Diseases Related to Travel. Center for Disease Control and Prevention [internet], Atlanta (GA): US Department of Health and Human Services.
  3. Public Health England [Internet]; Published 25 April 2014: Chikungunya. Government of United Kingdom
  4. Center for Disease Control and Prevention [internet], Atlanta (GA): US Department of Health and Human Services; Chikungunya Virus
  5. World Health Organization [Internet]. Geneva (SUI): World Health Organization; Guidelines on Clinical Management of Chikungunya Fever Guidelines on Clinical Management of Chikungunya ; October 2008
  6. MedlinePlus Medical Encyclopedia: US National Library of Medicine; Chikungunya virus

চিকুনগুনিয়া জন্য ঔষধ

Medicines listed below are available for চিকুনগুনিয়া. Please note that you should not take any medicines without doctor consultation. Taking any medicine without doctor's consultation can cause serious problems.