বিটরুট, যার অন্য নাম বিট, বিট গাছের মূল এবং সেটি এ্যামার‍্যান্থেসি পরিবারের অন্তর্গত। কাঁচাই খাওয়া হোক অথবা গ্রেট করে স্যালাডে দেওয়াই হোক, অথবা স্যুপেই মেশানোই হোক, এর গাঢ় লাল রঙকে না দেখা অসম্ভব। এটা শুধু আকর্ষণীয় চেহারা এবং রঙের জন্যেই নয়, এর রোগ উপশমকারী এবং স্বাস্থ্য গড়ে তোলার গুণের জন্যও সুপারফুড হিসাবেও জনপ্রিয়। রস, হামাস, অথবা স্যালাড, বিটরুট তার রঙ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ এবং সুগন্ধের জন্য বিভিন্ন খাবারে উপকরণ হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

রোমানরা সর্ব প্রথম বিট চাষ শুরু করেন। তবে, তখন এটি কেবল পশুর খাদ্য হিসাবে ব্যবহৃত হয়। ষষ্ট শতকে এটি মানুষের খাদ্য হিসাবে জনপ্রিয়তা পেল। 19 শতকের মধ্য ভাগে ওয়াইন'এ রঙ আনার জন্য বিটরুট ব্যবহার করা হত।

চাষ করার পরে, সমস্ত গাছটিই খাবার উপযুক্ত হয়, শিকড় থেকে গাছ পর্যন্ত। এর জনপ্রিয়তার অন্যতম কারণ হল যে এই নানা ভাবে বিটকে আপনার খাদ্যে ব্যবহার করতে পারেন। সিদ্ধ, রোস্ট, আচার, প্রেশার কুক করে, ভেজে, সিদ্ধ করে, রস বানিয়ে অথবা কাঁচাই স্যালাডে দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।

বিটে রয়েছে প্রচুর পুষ্টি এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যেগুলি শরীরে পক্ষে খুবই উপকারী। নিয়মিত ভাবে খেলে বিট রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এছাড়াও বিট যকৃত রক্ষা করে এবং কর্কট রোগের থেকেও সুরক্ষা প্রদান করে। প্রস্রাবের মাধ্যমে দেহ থেকে অধিবিষ বিতারণেও বিট সহায়তা করে।

বিট সম্পর্কে কিছু মৌলিক তথ্য:

  • বৈজ্ঞানিক নাম: বিটা ভালগারিস
  • পরিবার: এ্যামার‍্যান্থেসি
  • সাধারণ নাম: বিট
  • সংস্কৃত নাম: পালঙ্ক
  • যে অংশ ব্যবহারযোগ্য: শিকড় এবং পাতা
  • আদি উৎপত্তি এবং ভৌগলিক বিতরণ: মনে করা হয় যে বিটের উৎস হল জার্মানি অথবা ইটালি এবং পরে তা উত্তরপূর্ব ইউরোপে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতবর্ষ এটি বিশেষ ভাবে হরিয়ানা, উত্তর প্রদেশ, হিমাচল প্রদেশ, পশ্চিমবঙ্গ এবং মহারাষ্ট্রে বিটের চাষ হয়। 
  • মজার তথ্য: এ্যাপেলো-সয়ুজ পরীক্ষা-মূলক প্রকল্পে এ্যাপেলো 18'র মহাকাশচারীদের মহাকাশে "স্বাগতম পানীয়' হিসাবে বিটের সুপ পান করতে দেওয়া হয়েছিল।
  1. বিটের পুষ্টিগুণ সংক্রান্ত তথ্য - Beetroot nutrition facts in Bengali
  2. স্বাস্থ্যের উপকারে বিট - Beetroot health benefits in Bengali
  3. বিটের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া - Beetroot side effects in Bengali
  4. উপসংহার - Takeaway in Bengali
বিটরুট: উপকারীতা, ব্যবহার এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ৰ ডক্তৰ

কাঁচা বিটের প্রায় 88%ই জল। বিভিন্ন খনিজের, যেমন ক্যালশিয়াম, ফসফোরাস এবং পটাশিয়াম এবং ভিটামিন যেমন এ, বি1, বি2, বি3, বি9 এবং সি'র খুব ভাল উৎস হচ্ছে বিট।

ইউএসডিএ'র জাতীয় পুষ্টি-সংক্রান্ত তথ্য ভাণ্ডার অনুযায়ী 100 গ্রাম বিটে নিম্ন লিখিত পুষ্টিগুলি পাওয়া যায়:

পুষ্টি প্রতি 100 গ্রামের মান
জল 87.58 গ্রাম
শক্তি 43 গ্রাম
প্রোটিন 1.61 গ্রাম
চর্বি 0.17 গ্রাম
শ্বেতসার 9.56 গ্রাম
তন্তু 2.8 গ্রাম
চিনি 6.76 গ্রাম
খনিজ প্রতি 100 গ্রামের মান
ক্যালশিয়াম 16 মিলিগ্রাম
লোহা 0.8 মিলিগ্রাম
ম্যাগনেশিয়াম 23 মিলিগ্রাম
ফসফোরাস 40 মিলিগ্রাম
পটাশিয়াম 325 মিলিগ্রাম
সোডিয়াম 78 মিলিগ্রাম
দস্তা 0.35 মিলিগ্রাম
ভিটামিন প্রতি 100 গ্রামের মান
ভিটামিন এ 2 মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন বি1 0.031 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি2 0.04 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি3 0.334 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি6 0.067 মিলিগ্রাম
ভিটামিন বি9 109 মাইক্রোগ্রাম
ভিটামিন সি 4.9 মিলিগ্রাম
ভিটামিন ই 0.04 মিলিগ্রাম
ভিটামিন কে 0.2 মাইক্রোগ্রাম
ফ্যাট/ফ্যাটি অ্যাসিড প্রতি 100 গ্রামের মান
সুসিক্ত 0.027 গ্রাম
মোনো আনস্যাচুরেটেড 0.032 গ্রাম
পলি আনস্যাচুরেটেড 0.06 গ্রাম
Women Health Supplements
₹719  ₹799  10% OFF
BUY NOW
  • ওজন হ্রাস: বিটের 88%ই জল এবং এর চর্বির পরিমাণও খুবই কম। কাজেই ওজন হ্রাস করার জন্য এটি একটি ভাল খাদ্য। বিটে তন্তুর পরিমাণ খুব বেশি। কাজেই এটি হজমে সহায়তা করে, আর আপনারও পেট ভর্তি থাকার অনুভূতি হয়। কাজেই আপনি কম খান।
  • ব্যায়ামে সহযোগিতা: খেলোয়াড়দের জন্য বিট একটি চমৎকার পানীয় কারণ এটি ব্যায়ামের কাজ উন্নত করে এবং ক্লান্তি কমাতে সাহায্য করে।
  • মধুমেহর জন্য: মধুমেহ রোগীদের জন্য বিট একটি ভাল খাদ্য, কারণ এটি রক্তের গ্লুকোজের পরিমাণ হ্রাস করে এবং পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণে রাখে।
  • হৃদপিণ্ডের জন্য: বিটের প্রদাহ-বিরোধী এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ধর্ম রয়েছ। কাজেই এটি আপনার হৃদপিণ্ডের জন্য উপকারী। রক্তচাপ হ্রাস করে বিট কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার বিশৃঙ্খলাগুলির ঝুঁকি কমায়।
  • কর্কট রোগ প্রতিরোধী: কর্কট রোগ হওয়ার কারণ হল দেহের মধ্যে এ্যাপোপটসিস বা নিয়ন্ত্রিত ভাবে কোষগুলির মৃত্যু হওয়া। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ থাকার কারণে বিট এ্যাপোপটসিস প্রতিরোধ করে কর্কট রোগে বাধা দিতে পারে।
  • যকৃতের জন্য: বিটের হেপাটোপ্রটেকটিভ ধর্ম আছে কারণ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট হওয়ার জন্য বিট অক্সিডেটভ ক্ষতি কমাতে পারে।

রক্তচাপ হ্রাসে বিট - Beetroot lowers blood pressure in Bengali

উচ্চ রক্তচাপ একটি দীর্ঘস্থায়ী রোগ যার কোন তাৎক্ষনিক লক্ষণ নেই। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ হৃদযন্ত্রের অসুখ, কিডনি কাজ না করা এবং স্ট্রোকের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে। পরীক্ষা দেখিয়েছে যে বিট রক্তচাপ হ্রাস করতে পারে। বিটে পটাশিয়াম বেশি এবং সোডিয়াম কম থাকে। এই ভারসাম্য রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়।

আরেকটি পরীক্ষা দেখিয়েছে যে বিটে খাদ্যের নাইট্রেট খুব বেশি থাকে যা রক্তচাপ কমাতে সাহায্য করে। একটি প্রিক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে 50 মিলি বিটের রস পান করলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রক্তচাপ কমে যায়।

(আরও পড়ুন: উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা)

মধুমেহ রোগে বিট - Beetroot for diabetes in Bengali

মধুমেহ একটি দীর্ঘস্থায়ী পরিস্থিতি যেখানে দেহ চিনির বিপাকে ব্যর্থ হয়, ফলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বাড়তে থাকে। যদিও এই পরিস্থিতিকে বিপরীত মুখী করা যায় না, তবে খাদ্যে পরিবর্তন এনে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। 30 জন রোগী নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে যে প্রতি দিন নিয়মিত ভাবে বিটের রস পান করলে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কম হয়।

বিটে থাকে উচ্চপরিমানে পলিফেনলস, ফ্ল্যাভোনয়েডস এবং অ্যান্থোসাইনিনস। এই যৌগগুলি কোন পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই মধুমেহকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। 

বিট তন্তু সমৃদ্ধ - Beetroot is rich in fibre in Bengali

খাদ্য-তন্তু এক ধরনের কার্বোহাইড্রেট যেগুলি দেহের অভ্যন্তরে এনজাইম দিয়ে হজম করা যায় না। কাজেই এই তন্তুগুলি বৃহদান্ত্রে গিয়ে গেঁজিয়ে ওঠে। বিটে দ্রবণীয় এবং অ-দ্রবণীয়, দুই রকমের তন্তুই থাকে। গবেষণা জানাচ্ছে যে নিয়মিত ভাবে তন্তু সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরের খারাপ কোলেস্টেরল (এলডিএল) কম হয়ে গিয়ে কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার অসুখের ঝুঁকি কম হয়।

পর্যাপ্ত পরিমাণে তন্তু খেলে রক্তে গ্লুকোজের পরিশোষণের হার কমিয়ে দিয়ে টাইপ 2 মধুমেহ'র ঝুঁকি কম করা যায়।

এ'ছাড়াও, তন্তু খুব ভাল জোলাপের কাজ করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। এর কারণ হল তন্তু মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে পেট পরিষ্কার মসৃণ করে।

কর্কট রোগ প্রতিরোধে বিট - Beetroot for cancer prevention in Bengali

কর্কট রোগের বৈশিষ্ঠ হল কোষের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি। গবেষণা দেখাচ্ছে যে বিট অত্যন্ত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ, যা একে একটি শক্তিশালী কর্কট রোগ প্রতিরোধী বস্তু করে তুলেছে।

একটু প্রিক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে বিটের নির্যাসের টিউমার বিরোধী ধর্ম আছে। পশুদের অন্ননালীর কর্কট রোগ নিয়ে একটি পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। দেখা গিয়েছিল যে লাল বিট প্রদাহ এবং এ্যাপোপটসিস, অর্থাৎ নিজে থেকেই কোষের মৃত্যু, হ্রাস করতে পারে।

গবেষকদের মতে বিটের কেমোপ্রিভেন্টিভ ধর্মের কারণ হল এতে উপস্থিত বিটাসায়ানিন, বিটেইন এবং বিটালাইনস নামক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টগুলি।

আরেকটি গবেষণা ইঙ্গিত দিয়েছে বিটেইন, একটি খাদ্য রঙ করার রঞ্জক পদার্থ, যা বিটে উপস্থিত থাকে, স্তনের কর্কট রোগ এবং প্রোস্টেটের কর্কট রোগের বিরুদ্ধে কেমোপ্রিভেনটিভ সম্ভাবনা আছে।

বিট থেকে কর্কট রোগ বিরোধী ওষুধ তৈরির সম্ভাবনা আছে কিনা, তা জানার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন আছে।

ওজন হ্রাসে বিট - Beetroot for weight loss in Bengali

 

স্থূলতা স্বাস্থ্যের একটি পরিস্থিতি যেখানে শরীরে অত্যধিক মেদ জমে থাকে। নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং খাদ্যাভ্যাসে সামান্য পরিবর্তন করে ওজন কমান যেতে পারে।

97 জন স্থূলকায়া মহিলাদের নিয়ে একটি ক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখিয়েছে যে চর্বি-সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ কম করে এবং জল-সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ বৃদ্ধি করে ওজন কমাতে সাহায্য করে। কাজেই বিট একটি আদর্শ সবজি কারণ এর 88%ই জল এবং চর্বির পরিমাণ অতি সামান্য।

বিটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে খাদ্য-তন্তু। বেশি পরিমাণে তন্তু খেলে চর্বির পরিমাণ কমতে থাকে এবং ওজন হ্রাসে সাহায্য করে। এছাড়াও, তন্তু-সমৃদ্ধ খাদ্য বেশি সময় ধরে চিবাতে হয়, ফলে জলের পরিশোষণ বৃদ্ধি পায়। এর ফলে দীর্ঘ সময় ধরে আপনার মনে হয় যে আপনার পেট ভর্তি আছে। খাদ্যের চিনির পরিশোষণও হ্রাস পায়।

(আরও পড়ুন: ওজন হ্রাসের খাদ্য তালিকা)

ক্রীড়াবিদের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য বিট - Beetroot for athletic performance in Bengali

অনেক ক্রীড়াবিদরাই, বিশেষত অপেশাদাররা, প্রায়ই সহজে শারীরিক পরিশ্রম এবং দেহ থেকে জল বেড়িয়ে যাওয়ার কারণে অবসন্ন হয়ে পড়েন। এতে প্রায়শই তাদের প্রদর্শন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। গবেষণা দেখাচ্ছে যে বিটের রস কাজের সময়ে তাদের উৎপাদনশীলতা এবং প্রদর্শনের উন্নতি করতে পারে।

আন্টি-অক্সিডেন্ট এবং পুষ্টি যেমন পটাশিয়াম, সোডিয়াম, বিটেইন, বিটালাইনস এবং  খাদ্যর নাইট্রেটের উৎকৃষ্ট উৎস হচ্ছে বিট। এই সব উপাদানগুলি একজন খেলোয়াড়ের প্রদর্শন উন্নত করতে পারে।

মুখের লালার সংস্পর্শে এসে খাদ্যের নাইট্রেটগুলি নাইট্রেটে রূপান্তরিত হয়। এই নাইট্রেটগুলি রক্তবাহী নালীগুলিকে শিথিল করতে সাহায্য করে। এর ফলে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়। রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পেলে পেশীগুলিতে অক্সিজেনের সরবরাহ বৃদ্ধি পায় এবং দেহের সহনশীলতাও বৃদ্ধি পায়।

বিটের প্রদাহ-বিরোধী ধর্ম - Beetroot as an anti-inflammatory agent in Bengali

আঘাত বা সংক্রমণের বিরুদ্ধে দেহের প্রাকৃতিক প্রতিক্রিয়া হল প্রদাহ। এর উপসর্গগুলি হল জায়গাটি লালচে হয়ে যাওয়া, ফুলে যাওয়া এবং বেদনা অনুভব করা। পরীক্ষাতে দেখা গিয়েছে যে বিটের কার্যকরী প্রদাহ-বিরোধী ধর্ম রয়েছে। একটি প্রিক্লিনিক্যাল পরীক্ষা দেখাচ্ছে যে বিটের সম্পূরক খেলে প্রদাহ কমে যায়।

বিটের এই গুণের কারণ হল এতে বিটালাইন'এর উপস্থিতি। গবেষণা আরও দাবি করে যে নিয়মিত ভাবে বিট খেলে মানুষের তীব্র প্রদাহের প্রতিরোধ হয়।

(আরও পড়ুন: প্রদাহ অসুখের প্রকার)

যকৃতের উপকার বিট - Beetroot benefits for liver in Bengali

যকৃত দেহের দ্বিতীয় বৃহত্তম অঙ্গ। শরীরের বিভিন্ন কার্যক্রম, যেমন পাচক এবং চর্বির বিপাক ক্রিয়ার দায়িত্ব হল যকৃতের। তবে যকৃতের প্রাথমিক দায়িত্ব হল পরিপাক নালী থেকে আসা রক্ত অন্যান্য অঙ্গে ছড়িয়ে পরার আগে সেই রক্তের পরিশোধন করা। খাদ্য এবং ঔষধের মাধ্যমে যে সব রাসায়নিক এবং ড্রাগ আমাদের দেয়ে প্রবেশ করে সেই অধিবিষগুলিকে দেহ থেকে বার করে দেওয়াও যকৃতের দায়িত্ব। যকৃতের কোন ক্ষতি হলে এই অধিবিষগুলি আমাদের দেহে জমে গিয়ে আমাদের দেহের কার্যক্রমের অবনতি ঘটবে।

যদিও আমাদের খাদ্যাভ্যাস এবং জীবন-শৈলী যকৃতের অসুখ হওয়ার ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, দেখা গিয়েছে যে অক্সিডেটিভ চাপ যকৃতের এই ক্ষতির গতি বৃদ্ধি করে। অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ বিট একটি চমৎকার হেপাটোপ্রোটেকটিভ এজেন্ট হতে পারে।

পরীক্ষাতে দেখা গিয়েছে যে বিটালাইন, বিটের অন্তর্গত একটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, এই অক্সিডেটিভ ক্ষতি থেকে সুরক্ষা দিতে পারে। একটি প্রিক্লিনিক্যাল পরীক্ষাতে পাওয়া গিয়েছে যে এন-নাইট্রোসোডাইইথাইলএমিন ডিএনএ এবং যকৃতের ক্ষতি করে। পরীক্ষাটিতে আরও পাওয়া গিয়েছে যে 28 দিন ধরে বিটের রসের সম্পূরক গ্রহণ করলে ডিএনএ এবং যকৃতের এই ক্ষতি হ্রাস করা যায়। আরেকটি গবেষণা দেখিয়েছে যে বিটের নির্যাস যকৃতের কর্কট রোগাক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি এবং ছড়িয়ে পরাকে হ্রাস করতে পারে।

(আরও পড়ুন: যকৃতের কর্কট রোগের চিকিৎসা)

কথায় বলে "অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট"। বিটের ক্ষেত্রেও এটা সত্যি। অত্যন্ত পুষ্টিকর এই সবজি পরিমিত মাত্রায় খেলে আমাদের দেহের অনেক উপকার হতে পারে। তবে বিটের কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে, সেগুলির কিছু নিচে দেওয়া হল:

  • অত্যধিক পরিমাণে বিট খেলে বিটুরিয়া নামে একটি অসুখ হতে পারে। এর উপসর্গগুলি হল গোলাপি অথবা লাল রঙের প্রস্রাব অথবা মল হওয়া। যদিও শুনে এটি বিপদজনক মনে হয়, তাহলেও এটি ক্ষতিকারক নয়। 48 ঘণ্টা সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
  • যেহেতু এই সবজিতে প্রচুর পরিমাণ অক্সালেট আছে, তাই অত্যধিক খেলে বৃক্কে পাথর জমতে পারে। সিদ্ধ করলে বা রান্না করলে অক্সালেটের পরিমাণ কমে যায়।
  • যাদের পেটের গণ্ডগোল আছে, অথবা যাদের পাকস্থলী সংবেদনশীল, বেশি বিট খেলে, বিশেষত কাঁচা বিট খেলে সমস্যা বাড়বে।
  • যদিও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে বিট উপকারী, তবে অত্যধিক খেলে হাইপোটেনশান বা রক্তচাপ নেমে যেতে পারে
  • বিটের ঘন রস অথবা সরাসরি বিটের রস পান করলে গলা বন্ধ হয়ে দিয়ে কথা বলতে অসুবিধা হতে পারে।
Pushyanug Churna
₹450  ₹499  9% OFF
BUY NOW

বিটের বিভিন্ন ঔষধি গুণ এবং যে ভাবে বিভিন্ন প্রকারে বিট খাওয়া যায়, তা বিবেচনা করে এটিকে সব সব চেয়ে স্বাস্থ্যকর সবজি বলে গণ্য করা যায়। বিটের কিছু উপকারীতার মধ্যে আছে রক্তচাপ হ্রাস করা এবং মধুমেহ নিয়ন্ত্রণ করা। এর অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট গুণ কর্কট রোগ এবং যকৃতের রোগ প্রতিরোধ করতে পারে। তন্তু সমৃদ্ধ হওয়ায় কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে। যদিও বিটের খুব বেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই, তবুও অত্যধিক পরিমাণে খেলে কিম্বা সঠিক ভাবে না খেলে শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে।

Dr. Dhanamjaya D

Dr. Dhanamjaya D

Nutritionist
15 Years of Experience

Dt. Surbhi Upadhyay

Dt. Surbhi Upadhyay

Nutritionist
3 Years of Experience

Dt. Manjari Purwar

Dt. Manjari Purwar

Nutritionist
11 Years of Experience

Dt. Akanksha Mishra

Dt. Akanksha Mishra

Nutritionist
8 Years of Experience

তথ্যসূত্র

  1. United States Department of Agriculture Agricultural Research Service. Basic Report: 11080, Beets, raw. National Nutrient Database for Standard Reference Legacy Release [Internet]
  2. Health Harvard Publishing, Updated: April 3, 2019. Harvard Medical School [Internet]. Potassium and sodium out of balance. Harvard University, Cambridge, Massachusetts.
  3. Leah T, Peter M Clifton. Nutr J. 2012; 11: 106. PMID: 23231777
  4. Kapadia GJ, Tokuda H, Konoshima T, Nishino H. Chemoprevention of lung and skin cancer by Beta vulgaris (beet) root extract. Cancer Lett. 1996 Feb 27;100(1-2):211-4. PMID: 8620443
  5. John F. Lechner et al. Drinking Water with Red Beetroot Food Color Antagonizes Esophageal Carcinogenesis in N-Nitrosomethylbenzylamine-Treated Rats J Med Food. 2010 Jun; 13(3): 733–739. PMID: 20438319
  6. Kapadia GJ, Azuine MA, Rao GS, Arai T, Iida A, Tokuda H. Cytotoxic effect of the red beetroot (Beta vulgaris L.) extract compared to doxorubicin (Adriamycin) in the human prostate (PC-3) and breast (MCF-7) cancer cell lines. Anticancer Agents Med Chem. 2011 Mar;11(3):280-4. PMID: 21434853
  7. Ello-Martin JA, Roe LS, Ledikwe JH, Beach AM, Rolls BJ. Dietary energy density in the treatment of obesity: a year-long trial comparing 2 weight-loss diets. Am J Clin Nutr. 2007 Jun;85(6):1465-77. PMID: 17556681
  8. Joanne Slavin. Fiber and Prebiotics: Mechanisms and Health Benefits. Nutrients. 2013 Apr; 5(4): 1417–1435. PMID: 23609775
  9. Sha Li et al. The Role of Oxidative Stress and Antioxidants in Liver Diseases. Int J Mol Sci. 2015 Nov; 16(11): 26087–26124. PMID: 26540040
  10. ajka-Kuźniak V, Szaefer H, Ignatowicz E, Adamska T, Baer-Dubowska W. Beetroot juice protects against N-nitrosodiethylamine-induced liver injury in rats. Food Chem Toxicol. 2012 Jun;50(6):2027-33. PMID: 22465004
  11. Kapadia GJ et al. Chemoprevention of DMBA-induced UV-B promoted, NOR-1-induced TPA promoted skin carcinogenesis, and DEN-induced phenobarbital promoted liver tumors in mice by extract of beetroot. Pharmacol Res. 2003 Feb;47(2):141-8. PMID: 12543062
  12. Watts AR, Lennard MS, Mason SL, Tucker GT, Woods HF. Beeturia and the biological fate of beetroot pigments. Pharmacogenetics. 1993 Dec;3(6):302-11. PMID: 8148871
Read on app